চুল পড়া রোধে চার খাবার

মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অকুতোভয় সাংবাদিক, মানবাধিকার ও পরিবেশকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক সাহা। তিনি খুলনায় সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ইটিভি প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিবিসি বাংলা বিভাগের কন্ট্রিবিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রদায়িকতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হলে স্বাধীন মত প্রকাশ ও মুক্ত সাংবাদিকতা জরুরি। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মানিক সাহা সে কাজই করেছেন। তিনি ধর্মান্ধতাসহ সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখনীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তাদেরকে রুখে দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছেন। এ কারণে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালের আজকের দিনে চরমপন্থীদের বোমা হামলায় নিহত হন তিনি। মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের এদিনে খুলনা প্রেস ক্লাবের অদূরে ছোট মির্জাপুরে প্রবেশ মুখের রাস্তায় দুষ্কৃতকারীদের বোমা হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন মানিক চন্দ্র সাহা। মরণোত্তর একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সাংবাদিক মানিক সাহার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মানিক সাহার বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চালতেতলা গ্রামে। মানিক সাহা কালিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কালিয়া মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি এবং খুলনার মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে স্মাতক পাশ করেন। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত দৈনিক সংবাদ ও নিউএজ পত্রিকার খুলনাস্থ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও বিবিসি বাংলার খণ্ডকালীন সংবাদদাতা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, খুলনা চ্যাপ্টারের সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত মানিক সাহা ছাত্রজীবন থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় লালিত কর্মজীবনেও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াই-সংগ্রামে। বুর্জোয়া শাসক-শোষক শ্রেণি ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার ছিল তার কণ্ঠ ও ক্ষুরধার লেখনী।
যেভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক মানিক সাহাকেঃ
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। সেদিন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে খুলনা প্রেসক্লাবে আসেন সাংবাদিক মানিক সাহা। এরপর একজন পরিচিত লোক আসেন তার কাছে। তারা কিছুক্ষণ একান্তে কথা। লোকটিকে বিদায় দিয়ে মানিক সাহা বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রিকশায় ওঠেন। কিন্তু, প্রেসক্লাবের কাছাকাছি ছোট মির্জাপুরে আসতে না আসতেই দুষ্কৃতকারীরা বোমা ছুড়ে মারে তার দিকে। বোমায় মানিক সাহার মাথা উড়ে যায়। মগজ ছিটকে পড়ে রাস্তায়, পাশের বাড়ির সীমানা প্রাচীরে। আর লাশ পড়ে থাকে রাস্তায়। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিকরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তারা পরনের কাপড় দেখে মানিক সাহাকে শনাক্ত করেন। এ হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর ১৭ জানুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়। খুলনা সদর থানার এসআই রণজিৎ কুমার দাস হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২০ জুন খুলনা থানার তৎকালীন ওসি মোশাররফ হোসেন ৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিরা হচ্ছে বুলবুল, আলী আকবর ওরফে শাওন, আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম, নুরুজ্জামান ওরফে সুমন এবং মিঠু। পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশে কেএমপির ডিবির পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন পাল ২০০৭ সালের ২ ডিসেম্বর অধিকতর তদন্তের চার্জশিট দাখিল করেন। এতে শুধু আবদুল হাই ইসলাম ওরফে কচির নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
একযুগ পরে ২০১৬ সালে মামলায় নয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়। খুলনা বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিল্লালসহ আলোচিত এ মামলায় নয়জনকে যাবজ্জীবন সাজার রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলো সুমন ওরফে নুরুজ্জামান, বুলবুল ওরফে বুলু, আকরাম ওরফে বোমারু আকরাম, আলী আকবর ওরফে শাওন। এরা কারাগারে আছেন। সাত্তার ওরফে ডিস্কো ছাতার, বেল্লাল, মিথুন, সরোয়ার ওরফে সরো, সাফায়াত ওরফে শওকত ওরফে সাকা পলাতক। এ মামলায় দু’জনের বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হলেন ওমর ফারুক ওরফে কচি ও হাই ইসলাম ওরফে কচি। এছাড়া বিস্ফোরক মামলায় ১০ আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।
খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহার হত্যার পুনঃতদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিক সমাজসহ বিশিষ্টজনেরা। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাংবাদিক মানিক সাহার হত্যাকারীরা সমাজে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে তাদের দলীয় ক্যাডাররা তাকে হত্যা করেছে। অবিলম্বে পুনঃতদন্ত করে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসি দাবি জানান। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ও সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ। নেতারা বিস্ফোরক অংশের মামলা পুনঃ তদন্তের দাবি জানান। কারণ মানিক সাহা হত্যা ঘটনার দুটি মামলার বিচার শেষ হলেও বিস্ফোরক অংশে সবাই খালাস পেয়েছে। সাংবাদিক মানিক সাহার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মানিক সাহার শারীরিক মৃত্যু হলেও কাপুরুষরা তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। মুক্তবুদ্ধির স্বাধীন চর্চা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রকৃত খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। তার বর্বরোচিত হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতাসহ হত্যার নেপথ্য নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। প্রখ্যাত সাংবাদিক মানিক সাহার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
nuru.etv.news@gmail.com